বিষাক্ত মদ পরীক্ষা করতে গিয়ে বিক্রেতার মৃত্যু

ক্রেতার কথা বিশ্বাস না করে নিজের দোকানের বিষাক্ত মদ পান করে মারা গেছেন ভারতের এক মদ ব্যবসায়ী।

পশ্চিমবঙ্গের একটি হাসপাতালে মারা যাওয়া ওই ব্যক্তির নাম চন্দন বলে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

চৌধুরীপাড়ায় চন্দন ওরফে গুলবার মাহাতোর চোলাইয়ের ঠেকে তারা নিয়মিত খদ্দের। মঙ্গলবার দু’-এক চুমুক মেরেই কেমন সন্দেহ হয়েছিল তাদের। বলেছিলেন, ‘কিছু গোলমাল আছে। স্বাদটা যেন অন্য রকম, কেমন অস্বস্তি হচ্ছে।’

পাত্তা দেননি চন্দন। জোর দিয়ে বলেছিলেন, ‘গোলমাল হতেই পারে না। খুব ভাল জায়গা থেকে সাপ্লাই আসে।’ তবু দু’-এক জন গাঁইগুঁই করতে থাকায় নিজেই ঢকঢক করে চোলাই গলায় ঢেলে বলেন- ‘দেখ, আমিও তো খাচ্ছি। মাল ঠিকই আছে।’

বুধবার রাতে কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে মারা গেছেন চন্দন। শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি বলরাম মাহাতো জানালেন, সে দিন শুরুতে চোলাই খাননি চন্দন। অন্যদের অাশ্বস্ত করতেই খেতে শুরু করেন। চন্দনের ভাই লক্ষ্মীও বুধবার রাতেই মারা গিয়েছেন কল্যাণীর হাসপাতালে।

বিষমদের জেরে মৃত্যুমিছিল বৃহস্পতিবারেও থামেনি। এ দিন সকালে কৃষ্ণনগরে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে কৃষ্ণ মাহাতো (২৮) এবং গঙ্গাধর মাহাতোর (৩০) মৃত্যু হয়। ফলে মৃতের সংখ্যা এই নিয়ে দাঁড়াল ১২। রাত পর্যন্ত শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ২৮ জন।

শুক্রবার মন্ত্রী তথা তৃণমূলের নদিয়া জেলা পর্যবেক্ষক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের শান্তিপুরে আসার কথা। বিজেপি নেতারাও গ্রামে যেতে পারেন বলে খবর। ‘গণমৃত্যুর প্রতিবাদে’ এসইউসি ১২ ঘণ্টা নদিয়া জেলা বন্‌ধের ডাক দিয়েছে।

বিষমদে মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই আবগারি দফতর ১১ জনকে সাসপেন্ড করেছিল। এ দিন ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে শান্তিপুর থানার ওসি সৌরভ চট্টোপাধ্যায়কে। পূর্ব বর্ধমানের কালনা ও পূর্বস্থলী থেকে সঞ্জয় ঘোষ, বিজয় দাস এবং নাড়ুগোপাল দাস নামে তিন জনকে ধরা হয়েছে। তাদের কাছে চোলাই ও মদ তৈরির সরঞ্জাম মিলেছে।

এ দিন শান্তিপুর থেকে আর কেউ গ্রেফতার না হলেও সেখানকার আরও অনেকে চোলাই কারবারে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। শান্তিপুর গিয়ে আইজি (দক্ষিণবঙ্গ) নীরজকুমার সিংহ বলেন, আটকদের জেরা করা হচ্ছে। কিছু সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তার রাসায়নিক পরীক্ষা হচ্ছে। চোলাই কোথা থেকে এসেছিল? আইজি বলেন, সেটা জানতে একটু সময় লাগবে।

এছাড়া দুর্গাপুরে পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, ‘যারা কালনায় মারা গিয়েছিল, তাদের সাহায্য করে দিয়েছেন তো? পরিবারগুলোকে দু’লক্ষ টাকা করে দিতে বলা হয়েছে।’ পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘এটা নদিয়ার ঘটনা।’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নদিয়ার জেলাশাসককে বলে দেবেন।’

প্রশ্ন হল, চন্দন ও তার ভাই লক্ষ্মীর পরিবারও কি ক্ষতিপূরণ পাবে? নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত যা সিদ্ধান্ত, তাতে ওদের টাকা দেওয়া হবে না।’

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment